মঙ্গল্বার ৩০ †g ২০২৩
Space Advertisement
Space For advertisement


ঘুরে এলাম বদরপুর


আমাদের কুমিল্লা .কম :
08.03.2019

মোহাম্মদ হাতেম অর রশীদ।।
আমরা রেলওয়ে পরিবার। এটা ছিল ছোটকাল থেকে আমাদের মনে প্রাণে ও বাহ্যিক আচরণে। কিন্তু এখন চিন্তা করলে আশ্চর্য লাগে এটা ভেবে যে, কি ভাবে আমরা নিজেদেরকে রেলওয়ের পরিবার হিসাবে সংযুক্ত করলাম।
আমি মোঃ হাতেম অর রশিদ এই মুহূর্তে যখন ভ্রমণ করছি তখন কর্মজীবনের অবসান ঘটিয়ে অবসরে আছি। ৬ মাস পূর্বে সুদূর আমেরিকা থেকে রাবার কেমিস্ট হিসাবে কাজের অবসরে যাই। আমেরিকাতে আমি স্টুডেন্ট হিসাবে ১৯৭৪ সনে যাই এবং পরে ঔব অত:পর কেমিষ্ট হিসাবে আমি চাকুরিতে যোগদান করি। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পূর্বে আমি কুমিল্লা পলিটেকনিকেল থেকে (সিভিল ইঞ্জীনিয়ারিং) ডিপ্লোমা করি। আমরা চার ৪ভা Jersey City State College থেকে বিএস সম্পন্ন করি।ই পাঁচ ৫ বোন। আমি পরিবারের ৩য় সন্তান। যেটা বলছিলাম রেলওয়ে পরিবার, আমার বাবা ১৯২৭ সালে রেলওয়েতে যোগদান করেন লাকসাম রেলওয়ে জংশনে লোকো সেড এ। পরবর্তীতে চার বৎসর পর ওনার বড় মামাত ভাই আলী হোসেন সাহেবের পরামর্শে আলী হোসেন সাহেবের কর্মস্থল আসামের বদরপুর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন সহকারী ফায়ারম্যান হিসাবে।
এখানে একটি কথা না বললেই নয়। আমার বাবা ছোটকালেই তার বাবা মাকে হারিয়ে উনার মামার বাড়ি লাকসাম এর সমিসপুরে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই ওনার মামীর আদর ¯েœহে বড় হতে থাকেন। পরবর্তীতে মামির পরামর্শে ও ইচ্ছায় উনার মামাত ভাই আলী হোসেন ভাইয়ের সহযোগিতায় লকসাম রেলওয়ে জংশনে চাকুরিতে যোগ দেন।
বদরপুর স্টেশনের পূর্ব পাশে পানির সরবরাহ ট্যাংকের দক্ষিণে ৪টি লাগোয়া কোয়ার্টার এর মধ্যে বাবা ১টি বরাদ্দ পান। পরবর্তীতে আমার আম্মাসহ উক্ত কোয়ার্টারে উঠেন। বদরপুর স্টেশন আসামের করিমপুর জেলায় অবস্থিত। তখন বৃটিশ ভারতে এই রেলকে আসাম বেঙ্গল (অইজ) নামে অবহিত ছিল। নেরো গেজ পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা যাতে ট্রেন চলত। লামডিং হয়ে তিনসুকিয়া বদরপুর হয়ে পরে আমাদের ত্রিপুরা বেল্ট এ চাঁদপুরে আসত। বাবার মুখে শুনা। উনি ১৯৪২ এর বিশ্বযুদ্ধের সময় ওঠঅঈঙ ট্রেন চালাতেন। যা যুদ্ধের হতাহতদের বহন করতেন। লম্বা পথ অনেক সময় একটানা গাড়ি চলত ৩০-৪০ ঘন্টা পর্যন্ত। যা তাকে নিয়ে লিখা ‘সূর্যাস্তের আগে’ বই এ পড়েছি। যেটা বলছিলাম বদরপুর। এখানে বলে রাখি আমার বড় বোন ও বড় ভাই বদরপুর ই রেলওয়ে কোয়ার্টারে থাকাকালীন সময় জন্ম গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে আম্মা বাড়িতে চলে এসে কুমিল্লায় পরানপুরে দাদার ভিটা অবস্থিত আমার বাবার জন্মস্থানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। আমাদের অন্যান্য ভাইবোন সকলেই বাবার পৈত্রিক ঐ বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করি। বাবা ১৯৬৮ সানে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ঈজই থেকে অবসরে যান। বাবার সুদীর্ঘ কর্মজীবনের প্রায় অবসরে যাওয়ার ১০ বৎসর পূর্ব পর্যন্ত এই আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতেই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। আম্মা বদরপুর থেকে চলে আসার পর বাবা একাই থাকতেন। এই যে চাকুরীর সময়ের বেশীরভাগ সময় আসাম এলাকায় বসবাস করার সুবাদে বাবার থেকে শুনা বাবার জীবনের ঐ সময়ের স্মৃতি আমাদের মনে গেঁথে যায়। যা আমাদের জীবনের একটি না দেখা অধ্যায় রচিত হয়। পরবর্তীতে বাবার ইচ্ছা ছিল আমাদেরকে নিয়ে ঘুরে আসবে। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বাবার জীবদ্দশায় আর সেই কিন্তু যাওয়া হয়নি। বাবা গত হয়েছেন ২০০৪ সনে। আমিও কর্মজীবনের অবসরে গিয়েছি । সময় গড়িয়েছে অনেক। যাওয়া হয়নি তবে না যাওয়ার ক্ষুধাও মেটেনি। অত:পর গত সেপ্টেম্বরে দেশে এসে আমার ছোট ভাই মোঃ মামুন অর রশিদের সাথে কথা বলে আসাম ঘুরে দেখার একটি পরিকল্পনা করি। বাবার কর্মস্থল ও ২ভাইবোনের জন্মস্থান সর্বোপরি অন্য রাষ্ট্র এগুলো মনে দোলা দিচ্ছিল। বয়স হয়েছে কিস্তু না দেখার টানটাতো আছেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমানের সান্ধ্যকলীন ফ্লাইট এ কলকাতা যাই অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখে। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে চ(ABR) ঞধীর কারে পূর্বেই অনলাইনে বুকিং করা পার্ক স্টিট এ একটি সার্ভিস এপার্টমেন্টে উঠি তখন রাত প্রায় ১০.৩০ মিনিট।
দেখতে পুরাতন হলেও নীচে কমার্সিয়াল ফ্লোর বিভিন্ন অফিস আমরা লিফ্ট ওঠে গেলাম ফ্লোর ৩ এ। কলিংবেল দেয়া মাত্র ৬০/৬৫ বয়সের এক ভদ্রলোক এসে দরজা খুললেন। যার নাম মিষ্টার মারওয়া। ড্রয়িং রুমে বসালেন। বললেন আমার নিজের বাসা। ১ ছেলে চাকুরি করছে, চাকুরির কাজে অন্য শহরে গিয়েছে ৬দিন পর আসবে। মেয়ে বিয়ে দিয়েছি সে তার স্বামীর সাথে বোম্বে থাকে। আমরা স্বামী স্ত্রী। আমাদের বেডরুম ছাড়াও আরো ৩টি বেড রুম আছে সেখান থেকে ২টি বেডরুম ভাড়া দিই। ও ২টি রুম ভাড়া আছে আপনারা আমার ছেলের রুমে থাকবেন। আপনাদের সকালের নাস্তা ও আপনাদের সহযোগিতা/ সার্ভিস দেওয়ার জন্য লোক আছে, তার নাম পূজা তাকে রুম থেকে কল দিলেই পাবেন। পরে তার ছেলের বেড রুমই হল আমাদের থাকার রুম ভালোই ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে সাজানো পুরো রুম। মনে হলো আমরা কোন আত্মীয়ের বাড়িতে ছুটিতে বেড়াতে এসেছি। পরম আত্মীয় এবং অতি সম্মানিত মেহমানদারদের বেলায় যা হয়। তারা নিজেদের বেডরুম ছেড়ে দেয়। বলে আপনি এখানেই থাকবেন। আমাদেরও তাই মনে হচ্ছিল। সূদুর কলকাতায় আত্মীয়ের বাসা বলে মনে হচ্ছিল।
রাত্রিতে কাছেই একটি রেষ্টুরেন্টে রাতের ডিনার করলাম তারপর সেই পরম আতিথেয়তায় অতিথি হয়ে (ভাড়া দিয়ে) রাত্রি কাটালাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমে কফি বানিয়ে খেলাম। তারপর কল দিতেই ওপার থেকে বলল কি নাস্তা খাবেন (ডিম মামলেট/পাউরুটি সাথে সাবজি। আর চা কফি। রুমে খেতে পারেন অথবা ডাইনিংয়ে আসতে পারেন যেভাবে আপনারা চান। বললো আমার ১০ মিনিট লাগবে। যেই অর্ডার দিলাম এবং রুমেই ১২ মিনিটের মাথায় রুমে নক করল। খুলে দেখি সেই মেয়েটি মাঝাবী গড়ন/ শ্যামলা ২৫/২৬ হবে এক কথায় কর্মে দায়িত্বশীল একটি মেয়ে। পরে মিঃ মারওয়ার সাথে আলাপ করে জানলাম এই ৩ টি রুম ছাড়াও আরো ৩ টি ব্যক্তিগত আলাদা ঝঃঁফরড় অঢ়ধৎঃসবহঃ আছে উল্টো পাশে যা করপযবহ সহ ভঁষষ ঊয়ঁরঢ়ঃ ঝবৎারপব অঢ়ঢ়ধৎঃসবহঃ ঐ গুলিসহ পুরো সার্ভিস এপার্টমেন্ট সবগুলো এই পূজাই দেখাশোনা করে। সাথে ৫০ বয়সী আরেক ভদ্র মহিলা যিনি চধুসবহঃ নেয়াসহ পূজার কাজ তদারকি করেন এটা একটা ঝুংঃবস চালু হয়েছে। বোধ করি। আমেরিকাতে ২ বছর হয়েছে এই ভাবে মানুষ নিজ বাসায় বেডরুম খালি থাকলে অনলাইনে বুক করে রুম ভাড়া দেয়। আমার জীবনে প্রথম কলকাতায় আসা প্রথম রাতেই সেই রকম এপার্টমেন্ট এ থাকা সত্যিই নতুন অভিজ্ঞতা। সকাল ১১ টায় জেট এয়ার এর গুহাটি যাবার ফ্লাইট ছাড়বে। তাই টনবৎ কল করে ৯.৩০ মি: এ এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। সময় মত পৌছে বোডিং কার্ড নেই। একটু সময় ছিল তখন দুই ভাই মিলে খড়ঁহমব এ বসে কফি খাই। যথাসময়ে ১.২০ মিনিটে সরাসরি গুহাটি এয়ারপোর্ট অবতরণ করলাম। নেমেই মনে হচ্ছিল অনেক দিনের চেনা সেই জায়গা যদিও এই প্রথম এলাম। ছিমছাম গুছানো এয়ারপোর্ট বের হওয়ার সময় দেখলাম এবিটিএ এসি বাস ৯০রুপি টিকেট প্রতিজন। শহরে যায় পল্টন বাজার পর্যন্ত। বাসে চড়ে বসলাম। আশে পাশে তাকাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমাদের বাড়ি থেকে কুমিল্লা শহরে যাচ্ছি। বাড়িগুলো একেবারেই আমাদের কুমিল্লা শহরের মত শুধু তফাৎটা হলো আশে পাশে পরিষ্কার ও রিকশার জ্যাম নেই। মনে মনে শুধু চিন্তা করছিলাম কোন পরিচিত মুখ দেখিকিনা যেই আশা সেই ঘটলো। ২/৩ জন লোক লক্ষ্য করলাম পরিচ্ছন্ন সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছে নিজেদের মধ্যে । চেহারার মধ্যে ও মনে হচ্ছে বাঙ্গালী ভাব। ছোট ভাই কথা জুড়ে দিল। বলতে বলতে জানা গেল তার বাড়ি সিলেট জেলায়। কিন্তুু ১৯৫০ সালের দিকে বাবা বদরপুর চলে আসেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনো ওখানেই আছে। বংসরে ন্যূনতম একবার যাই তবে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া করিমগঞ্জ হয়ে চলে যাই। অসুবিধা হয়না।
আলাপে জানাগেল তার বাবার ব্যবসা বদরপুরে। পরবর্তীতে জীবিকার সন্ধানে সিলং চলে আসে। এখানে একটি মার্কেটে কাপড়ের দোকান। তার বয়স আনুমানিক ৫০ হবে। সাথে ২০/২২ বছরের ২টি ছেলে। বললাম ছেলেরা দেখতে সুন্দর। বেগম সাহেবাও কি দেখতে সুন্দরী নাকি ভাইজান? বলল ঠিকই ধরেছেন।
বেগম সাহেবা সুন্দরী। তাদের বাড়ি সিলংয়ে। ছেলেও ঠিক আছে শুধু ভিন্নতা হলো আমার না তারা শ্বশুরের। আমার শ্বশুর প্রয়াত হয়েছে ৪ বছর হলো। পারিবারিক প্রয়োজনে তার বাবার ব্যবসার হাল ধরছেন। বাবার পুরানো ব্যবসা, মার্কেটে দোকান আছে। জুতা বিক্রয় করেন। বার্মা গিয়েছিলাম সীমান্ত হাটে। যেমনটি আছে আপনাদের কুমিল্লা কসবায়। পরে আমরা ফ্লাই করে চলে আসছি। মাল বুকিং করে দিয়েছি। তার সাথে কথাকপোথন এর আমাদের উদ্দেশ্য গন্তব্য ও গন্তব্য সব জেনে গেল। বললেন গুহাটি পল্টন বাজার বাস থেকে নেমে খাবার দাবার সেরে নিব। পরে চলেন একসাথে টাটা সুমো টেক্সি করে

বিকাল ৪টায় রওনাদিয়ে সিলং পৌছাব সন্ধা ৮.৩০ দিকে। আপনারা সামনে বসেন ২জন ও ড্রাইভার। আমরা ৩ জন মাঝখানের সিটে বসছি, আরো একজনসহ মোট চারজন। আর পিছনের সিটে লোক না পেলেও চলে যাবে। প্রায় ৫০ মিনিট বাসে চড়ে আমরা রিনি বাজারে নামলাম। সবাই প্রয়োজন সেরে আসলে যথারীতি সিলং এর উদ্দেশ্যে টাটা সোমো জীপ নিয়ে আবার যাত্রা। যাত্রা সবই ঠিক ছিল, একটু বিপত্তি হলো শহর পার হতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগল। তৈল পুরাল গাড়ি চেক করল।
শহর ছাড়ার পরই ঘটল বিপত্তি। লোকজন যা দরকার তাই হয়ে গেল। কিন্তু ড্রাইভার এর যে সহযোদ্ধা (হেলপার) তার সিট ও যাত্রী দ্বারা পূর্ণ হয়ে গেল। এবার কি করবে? চিন্তা করছি। ওমা এ কি কান্ড দেখছি। (ম্যানুয়েল গাড়ি/ গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়) ড্রাইভার পাল্টিয়ে আরো সিনিয়র আরেকজন এবং সেটাই আসল ড্রাইভার। যে এতক্ষণ গাড়ি চালিয়েছে সে ছিল মূলত হেলপার। ড্রাইভার বর্তমান হেলপার কিনা গিয়ার এর হেন্ডেলটার দুদিকে দুই পা দিয়ে বসে গেছে। ড্রাইভারকে বললাম উঁচু নিচু এত লম্বা পথ গিয়ার পরিবর্তন আনেকবার করা লাগবে। কিভাবে চালাবেন। আর গন্তব্যে অনেক সময় লাগবে পৌঁছতে। বলল চিন্তা করবেননা, আমরা সামনে ৫জনও বসি মাঝে মধ্যে। কোন অসুবিধা হয়না। এই ভাবে প্রত্যেকদিন সিলং গুহাটি আসি। মুখস্ত রাস্তা। যাই হোক নতুন চালকের ২ ঘন্টা চালানের পর দাবা সেবং সদর পার করেই রাস্তার পাশে দাঁড়ালেন। বলল চা পান খেয়ে নেন। সে আবার সবজি কিনল নিজের বাসার জন্য। ওখানেই দেখলাম চা কাপ ভর্তি করে দুধ চা নেন। লুচি দিয়ে ভিজিয়ে খায়, যা আমরা ছোটকালে খেয়েছি বাবার মত করে। যা আমাদের চিটাগং এলাকায় গেলেও এইরকম দেখতে পাই। তারই প্রতিফলন দেখলাম। আর মনে হচ্ছিল আবার। এভাবেইতো বাবা চা খেত- তাইতো দেখছি। আর কাঁচা সুপারী দিয়ে ৫ খিলি পান বিক্রি করছে। একসাথে করে কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো ১০রুপি দাম। সবাই পান কিনছে এবং একটার পর একটা মজা করে খাচ্ছে। আমার ভাইয়ের অনুরোধে আমরাও কিনলাম। যথারীতি পানচিবুচ্ছি গাড়ি চলছে, সর্বমোট ৩ জায়গায় থামলো। রাত্র প্রায় ৯ টায় সিলং এ পৌঁছলাম। উঁচু নিচু রাস্তা চললো ৬০/৭০ কিলোমিটার গতিতে আবার উপরের চুড়ায় ৫ কিলোমিটার গতিতে চলল। সকল ভয় ভীতি শেষ করে সিলং পৌঁছে। এসে সেইসহ যোদ্ধা যার নাম মোঃ শহিদুল ইসলাম, তার সহযোগিতায় পরিচিত বাংলা হোটেলে উঠি। রেষ্টুরেন্ট এর খাবার মান ভাল। তিনজন রাত্রে খেলাম ১১৫০ রুপি। তবে কনকনে শীত। বাতাসের সাথে সাথে ঠান্ডা। খাবার সারার পর একটু উপরের দিকে রাস্তার মোড়ে হাটতে যাই। ১১.০০টার দিকে আসি। এখানে বলে রাখি আমরা কলকাতাতে গুহাটি থেকে সিলচর এর জেট এয়ার এর ২টি টিকেট কেটে নিই। যার সময় ছিল ২০ তারিখ দুপুর ১.৩০ মিনিট পরে শহিদ সাহেব বললেন আপনারা ভোরে রওনা দিলে গুহাটি যেতে টেক্সিতে ৩ ঘন্টা লাগবে রিজার্ভ। সকাল ৮ টায় রাওনা দিলে ১১টা বাজবে। ১১.৩০ মিনিট এ ফ্লাইট সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যাবেন। কিন্তু আমার একটি পরামর্শ আছে যেহেতু আপনি সিলচর যাবেন ইচ্ছা করলে এখান থেকেও যেতে পারেন। সকালে টাটা সোমো ছাড়ে ৬.৪০ মিনিট এ পেপারে নিয়ে যায় দিনের ২টার মধ্যে সিলচর পৌঁছে যাবেন। প্রতিজন সিট ভাড়া ৫৫০ টাকা করে। ১.৩০ মিনিট এ সিলং থেকে ছাড়বে আর ১০ টায় আপনি সিলচর পৌঁছে যাবেন। আমরা বললাম আবার সামনের সিটে ৪জন। বললাম আমি যোগাযোগ করে দেখি। ২টি গাড়ি যায় সিট কোনটা খালি আছে তার পর জানাব। উনি নগদ যোগাযোগ করে বললো সর্ব পিছনের ২ সিট ফাঁকা আছে। অনেক চিন্তা করে যেহেতু ৩০% রাস্তা চলে এসেছি পুনরায় উল্টো না গিয়ে বরং সামনেই যাই। একটা কথা বলে রাখি আমরা এলাকা/ মানুষের জীবনধারা এইসব দেখতেই তো এলাম তাহলে এটাই উত্তম। সিদ্ধান্ত রোডই উপযুক্ত আমাদের জন্য। এইসব চিন্তা করে রাজি হয়ে গেলাম। ভাই জানাল প্লেনের টিকেট টাকা ফেরৎ হবেনা। বললাম অসুবিধা নেই। সাইট সিট আর স্থানীয় খাবার চলবে। এখানে বলে রাখি যে এই এলাকায় অধিকমাত্রায় কুয়াশা হয় আর এ জন্যেই অনেক সময় ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা পরের দিন ভোরে ৬.৪০ মিনিট এর যাত্রী বহনকারী টাটা সোমোতে চড়ে যাত্রা দেই। সকাল বেলা আনুমানিক ৬.৩০ মি. এ এসে আমাদেরকে হাটার দূরত্বে বাস সার্ভিস এর স্থলে নিয়ে যায় এবং গাড়িতে বসিয়া দিয়ে গাড়ি ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। বেশি রাত্রি হওয়ার জন্য আমরা রাত্রে কলকাতা তে মোবাইল সিম কিনতে পারিনি। সকাল ৯টায় সিম এর দোকান খোলা পাইনি। গুহাটিতে এসে দেখি সিম বিক্রি হয়না বিদেশিদের কাছে। সিলং এ আরো কঠিন অবস্থা। শহিদুল সাহেব শোনার পর উনি বললেন আপনারা দুপুরে গিয়ে সিম কার্ড কিনতে পারবেন বদরপুরে। আমরা বন্ধু আছে নাম মাহমুদ। আমার বন্ধুর বাবার লাইব্রেরি এর ব্যবসা এখন সে দেখে। আপনারা যাওয়ার পর ওর দোকানে যাবেন। খাতির করবে সিম কিনে দিবে এবং বদরপুর এ দেখার ব্যবস্থা করে দিবে। সে ভাল মানুষ। সিলং খুবই পরিচ্ছন্ন শহর। গোছানো। ট্রাইবালদের বসবাস এখানেও। সিলেটের ভাষায় কথা বলে। তারা মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষ। পাশাপাশি ইংরেজিতে পারদর্শী। দোকান পাট পরিষ্কার, গোছানো জিনিসপত্রের দামও বড় শহরের মতই। যেমন সেখানের একটি রেডিমেট এর দরজায় ঝুলানো ১টি ব্লেজার এর দাম ৬০০০ ভারতীয় রুপি এবং একদাম।

আমরা যাত্রাপথে দুই জায়গায় দাঁড়িয়েছি। দুপুরের খাবার খেয়েছি রাস্তার ধারে দাম ও ব্যয় খুবই সামান্য। সবজি/রুটি/ডাল/ ছোটমাছ/ভাত সব মিলে ১০০রুপি পেট ভরা ভাত ও ডাল। একটু পরে পরে ছেলে ওয়েটার এসে বলে ডাল দিব/ ভাত নিবেন/ সালাত লাগবে। মজার ব্যাপার হলো খাবারের মানও ভাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছোট ছোট হোটেল। এ গাড়িতে সকালে সিলং লেকের পাশ দিয়ে দেখলাম জনবসতি খুব নেই, হালকা বাড়ি দেখা যায়। রাস্তা ঘাট পরিচ্ছন্ন। কেউ কাউকে অযথা বিরক্ত করেনা, স্পিড মেনে চলে। শৈলী অবকাঠামো গুহাটি থেকে সিলং এবং সিলং থেকে সিলচর অনেক চার্জ দেখেছি বেশ বড় এবং দৃষ্টিনন্দন নির্মান সহ। সিলং হতে সিলচর যেতে হবে বদরপুর হাট হয়ে। চিন্তা করে দেখলাম আমরা ত বদরপুর এ নামা উচিত। সিলচর বদরপুর থেকে ৪০ মিনিটের রাস্তা। বদরপুর হাট এ নামার সময় আমাদের জীপ এর অপর যাত্রীর সহযোগিতায় বদরপুর হাট থেকে সি এন জি নিয়ে ৩০রুপি ছিল ৩ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে বদরপুর পুলিশ স্টেশনের কাছে নামলাম। সেখানে আমাদের অপেক্ষায় থাকা সহযোগী লাইব্রেরি মালিক মাহমুদ সাহেবের দোকান। সিএনজি থেকে নেমে ৩ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম। ভদ্রলোক দোকানের ভিতরেই ছিল। নাম উচ্চারণ করা মাত্র উচ্ছাসচিত্তে বলল সামনে বসেন। আমিতো আপনাদেরই অপেক্ষায় আছি। আপনারা আসবেন বলে। বসেন চা খান। ছোট ভাই চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল এখানে বসেন। বলল সিম নিবেন না। জ্বি বলা মাত্রই বলল চা খাওয়ার পরেই ২/৩টি দোকানের পর পরেই সিমের দোকান নিয়ে গেল, দোকানীকে বলল আমার দেশী ভাল কাজ করে/ বাংলাদেশে কথা বলতে পারবো এমন সিম দাও। ২৯০রুপি দিয়ে সিম উঠালাম। প্রায় ১০ মিনিট ৩/৪টি কল করে প্রয়োজনীয় কথা সেরে আবার মাহমুদ সাহেবের দোকানে গেলাম। বসে বদরপুর রেলওয়ে কলোনির বর্ণনা দিলাম, যেখানে আমার বাবা থাকতেন। বলল চলেন। বেলা তখন আনুমানিক ৩টা হবে। রিক্সা নামানোর আউটার এ রেলওয়ে ওভারব্রিজ এর গোড়ায় দাঁড়াল। তারপর ৬/৭ কিলোমিটার হবে পূর্ব পাশ্বেই গিয়ে একটু সামনে দিকে এগুতেই সেই মাহিদ্রক্ষণ। সেই পানির ওভার হেড ট্যাংক যা কালের বিবর্তনে আগের ব্যস্ত দীর্ঘদিনের পুরোনো পরিত্যক্ত লিখিত বোর্ড লাগানো। দেখতে যাহ মনে কল্পনায় গাঁথা। পুরোনো পানির ট্যাংকের সাথেই ঘেঁষা পাম্প হাউজ এর উল্টা পাশে নতুন ওভারহেড ট্যাংক, আরো বড় আরো বিস্তৃত। পাশেই পুকুর বেশ বড়। পুকুরের পূর্ব পার্শ্বেই আনেক বড় এলাকায় একতলা রেলওয়ে কলোনি ঠিক যেমনটি লাকসামে আছে। ১নং প্লাট ফর্মের পশ্চিম প¦ার্শে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো। সেটা হলো ট্যাংকির পাশে লাগানো যে ৪/৫ টি বিল্ডিং ছিল বাবার বর্ণনা অনুযায়ী তার কোন চিহ্ন নেই। বলতে গিয়ে পাম্প ব্লু এর স্টাফ বললেন আগে ২টি লাইন ছিল। বর্তমানে ৮টি লাইন বড় জংশন মিটারগেজ। রেললাইনে বেড়েছে পূর্ব দিকে আর তাই পুরোনো কোয়ার্টার গুলো ভেঙ্গে সমান করা হয়েছে। আর পুরোনো বিল্ডিং এর পূর্বে যে ডোবা ছিল শুনেছি এই ডোবাই সংস্কার করে বড় আকারে পুকুর করা হয়েছে। আর যার মাটি উঠিয়ে পূর্ব পাড়ে সুবিশাল আকারে নতুন কোয়ার্টার হয়েছে। বলল আরো যাবেন না কি নতুন কোয়ার্টার এ। সময় তখন প্রায় ৪টা বাজে। পরের দিন আবার পুরো সিলচর বনধ্ হওয়ার কথা, তাই যাবার তাগিদ আর ভিন্ন দিকে তাকালাম না। ট্যাকিংর সাথেই ওয়েল ডিপো। যা সাধারণত জংশনে থাকে। তার পার্শ্বেই একটি অনেক পুরোনো কয়লার ইঞ্জিন, যার কাঠামো পড়ে আছে। সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের গাছ তার লতা গুলা দিয়ে ইঞ্জিনটি প্রায় আবৃত। একটু আবেগপ্রবণ হলাম, মনে হলো হয়তো এইটাই আমার বাবার চালানো ইঞ্জিনের মধ্যে একটি কিনা। দুইভাই দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম তারপর এলাকা ত্যাগ করলাম। পরে বদরপুর স্টেশন আউটার দেখানো স্টেশনের সিগনাল সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। ১জন রেলওয়ে স্টাফ দেখতে পেলাম। ওয়াকিটকি হাতে বলল আমি পয়েন্টসম্যান অর্থাৎ যারা রেল লাইনের কানেকশন চূড়ান্ত করেন। আমরা ছেলে বেলা থেকেই কিছু প্রচলিত শব্দের সাথে খুবই পরিচিত। তার মধ্যে লাইন্সম্যান ও ক্যাম্পসম্যান। এছাড়াও ড্রাইভার, ফায়ারম্যান, স্টেশন মাস্টার, টিটি, টিসি, গার্ড,এল আই,এইগুলো রেলওয়ে অভিধানের সাথে সম্পৃক্ত। আউটার ছেড়ে প্লাটফর্মে দিয়ে স্টেশনে স্টেশন মাস্টারের রুমে যাই। সহকারী স্টেশন মাস্টার এর সাথে কথা হয়। পরবর্তী ট্রেন সিলচর এবং গুহাটি কয়টায় কোন ট্রেন তা সম্পর্কে ধারণা নিই। আজকে ৭টায় ট্রেন ছাড়বে সিলচর যাবে। ওনার সাথে কথা বলার পর অভ্যর্থনায় গেলাম। একজন ভদ্রমহিলা বসা, ৫০ এর কোটায় বয়স। বললাম ২টা টিকেট দরকার গুহাটি। বলল কাউন্টার খুলবে ৬টায়, তবে সিলচরে পাবেন। টিটি বা এটেনডেন্ট এর সাথে কথা বলে দেখতে পারেন সিট যদি থাকে।
আমি রিটায়ার্ট মানুষ, যদি এর উপর তো থাকা যাবেনা। আর সিলচর স্টেশনও দেখা দরকার। যদি স্ট্যান্ডিং এ কোন সিট পাওয়া যায় গিয়ে দেখি। সেই মতে মাহমুদ ভাইকে বললাম সিলচর যেতে চাই। তিনি বললেন, লোকাল ট্রেন তো এখন নেই। আমার ভাই বললো লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কি আছে। বলল- ট্রেনের পাশেই প্রাইভেট গাড়ি থাকে চলেন দেখি। স্টেশনের পাশেই বের হয়ে দেখি ২টি গাড়ী এর মধ্যে ১টি মাইক্রোবাস। ভাই ছেলেটির নিজের গাড়ি ও আমার কাছের বাড়ির ছেলে। ভালো ড্রাইভ করে। ৩০ কিলো রাস্তা ৯০০ টাকা চায়, পওে ৮০০রুপিতে ঠিক করে দিলেন। ৩৫ মিনিট ড্রাইভ করার পর সিলচর শহরে ঢোকার পথেই রাস্তার পাশে এবিটিএস এর স্ট্যান্ড। ড্র্রাইভার ভাই বলল, বাস এসি। ৭/৮ঘন্টায় চলে যাবেন। সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়ার পর ভোর ৪টায় গুহাটি পৌঁছে যাবেন। মাঝে দাঁড়াবে ভাত খাওয়াবে। যদি ট্রেন এর সিটসহ টিকিট না পান এবং বাসেরও যাওয়ার এখন টিকেট না কিনেন ফিরে এসে তো বাসের টিকেটও পাবেন না। তার কথার অনুসরণ করে বাস স্টেশনে এসে বাস কাউন্টারে যাই। ২টি টিকেট কিনে নেই। যার ছাড়ার সময় ছিল সন্ধ্যা ৭টা। অতঃপর আবার মাইক্রোবাসে করেই সিলচর স্টেশনে যাই, যা ১০ মিনিটের রাস্তা। সিলচর স্টেশনে এ গিয়ে ছবি তুলি তারপর। টিকেট কাউন্টার ততক্ষণে খুলেছে মনে হয়। সন্ধ্যা ৬ টা। যোগাযোগ করে গুহাটির জন্য কোন সিট পেলাম না। আপন মনে ফিরে এলাম সিলচর টু গুহাটি, রাতের ট্রেনে আর চড়া হলোনা। ক্ষুধাও পেয়েছে একটু একটু। জিজ্ঞেস করলাম ভাল খাবার হোটেল কোনটি। সে স্টেশন এর সামনের রাস্তার উপর একটি ফাষ্টফুড এর দোকান দেখিয়ে দিল। ভালো মানের সুপ। অর্ডার করলাম আমাদের সামনে সব তৈরি করল। বাসে দুইভাই খেলাম। ওখান থেকে ৪০ রুপি ভাড়া দিয়ে বাস স্টপেজ এ আসলাম। তখন প্রায় ৬.৫০ মিনিট। একসাথে ৫টি পান চিপস ও কোক কিনলাম। আমি ডায়বেটিকস এর রোগী বহু আগে থেকেই। কিন্তু মেনটেইন করে চলি। এজন্য সকাল সকাল উঠে যাই নিয়মিত। সুগার কমে গেলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাছাড়া আমার মাঝে মধ্যেই ক্ষুধা লাগে। তাই সবসময় সাথে আপেল/ চকলেট/ কোক/ পানি রাখি। আমার প্রয়োজন মত খেয়ে নিই। ৭.১০ মিনিট এ বাসে উঠি। একটি কথা বলে নিই, সিলং থেকে বদরপুর হয়ে সিলচর। মোটকথা বদরপুর এর ২০ কিলোমিটার পূর্ব থেকে সিলচর এই ৫০ কিলোমিটার একবারেই আমাদের কুমিল্লা লালমাই এর মত। সমতলভূমি গোছানো ক্ষেত্র। মাঝে মাঝে ইটের ভাটা, ধান ক্ষেত। ছেলেরা বিকালে ধান কাটা মাঠে খেলা করছে। একই সময় মেয়েরা পুরানো কাঁথা শুকানোর জন্য রোদ্রে ছড়ানো হয়তবা ছোট ছেলেটি বিছানায় রাত্রি বেলায় প্রশ্রাব করেছে যার এ কাঁথার কিছু অংশে লেগেছে। কাঁথার ঐঅংশ ধুয়ে দিয়েছে। কাঠের আটিগুলো দিয়েছে শুকানোর জন্য । শুকিয়েও গেছে হয়ত বেলা তিনটার মধ্যে। তারপরও বাইরে শুকনা কাঁথা আছে, তার একটি মজা আছে। তাহলো রাত্রি বেলায় শেষ বিকালের গরমটা কাঁথায় থাকে। সেটা যে কি মজা আমরা জানি কারণ আমরাওতো গ্রামে বড় হয়েছি। গাড়ি ছাড়ল ৪৫মিনিট গিয়ে। বদরপুর গিয়ে আরো নতুন ৩ জন পেসেঞ্জার নিল, অত:পর দরজা বন্ধ। এমনটি ড্রাইভারের পিছনে পুরো কালো পর্দা দেয়া। যার কারণে এপাশ ওপাশ ও গাড়ির সামনে রাস্তা বা কিছুই দেখা যায়না। শীতাতপের কারণে গ্লাস গুলো খোলা তা ও বাইরে তেমন কিছু বুঝা যায়না। শুধু মাত্র ৩২” র একটি স্ক্রিন এ পুরানো হিন্দি ছবি দেখাচ্ছে। ওটা চলল রাত ১০.৩০ মিনিট পর্যন্ত, তারপর সেটিও বন্ধ। শুধু চাকার আওয়াজ সামনে কালোপর্দা জানালার উপর ও কালো পর্দা মনে হয় খাচার মধ্যে আছি। অনেকবার চিন্তা করলাম যে আসার সময় খোলা জীপ থেকে যা দেখেছি যদি নিচে পড়ে যাই। কেউ আমাদের নামও মুখে নিবেনা। অনেক চিন্তা করে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝিনি। ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি আমার পাশে ছোট ভাই নাই, তাছাড়া কিছু সিটও খালি। পরক্ষণেই মনে হলো কোন একটা রেস্টুরেন্টে থেমেছে। ঘুমের ব্যাঘাত হবে বলে সে আমাকে হয়তো জাগায়নি। তখনি ভাই এলো। বললো হোটেলে খাবার অর্ডার দিয়েছি ১৫ মিনিট লাগবে। রুটি /সবজি/ চাটনি/ শসার সালাত উঠেন। রাত তখন ১টা বাজে। দুইজন মিলে খেলাম। ঠান্ডা লাগছিল। চা খেলাম। পরে ভাইয়ের পরামর্শে কাঁচা সুপারী পান, কান গরম হলো। মনে হলো শীত নেই। বাস ছাড়ল ভোর ৪.১৫ মিনিটে। নেমেই সেখানে দেখলাম এবিটিএ বাস আছে ডাকছে পল্টন বাজার। সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে ৩০রুপি করে দিয়ে প্রত্যেকে বাসে চড়লাম। ৪.৪৫ এর দিকে পল্টন বাজারে নামিয়ে দিল। নেমেই দেখি আমাদের মতো ব্যাটারি চালিত রিক্সা, চালকের ৫০ উর্ধ্বে বয়স হবে। সিলেটি ভাষায় কথা বলে। বলল হোটেলে চলেন, ভালো রুম ভাড়া ১০০০ রুপি হবে। খুশি হয়ে রিক্সায় উঠলাম। ঐমুহূর্তে ভোর ৫টা। আশে পাশে আর কোন হোটেল খোলা ছিলনা। হোটেলের সামনে দিয়ে যাচ্ছি কিন্তুু জবপবঢ়ঃরড়হ কোন লাইট নেই। ৪/৫ টি হোটেল পার হবার পর বামের গলিতে একটি ১২ তলা নতুন বিল্ডিংয়ে নিল। লিফট চলে। একটি ছেলে এসে বলল পঞ্চম ফ্লোরে আসেন। ১৬০০রুপি ১ দিনের জন্য মাত্র ১ টি ডাবল বেড। এসি নাই, একটি রুমই আছে। রুম দেখতে গেলাম ছেলেটিসহ। রুম পছন্দ হলোনা। আর এসি ছাড়া থাকতে চাইনা, ঘুম হবে না। টায়ার্ড সারারাত জার্নিতে। পরে পাশের হোটেলে গেলাম আধা ঘন্টা পর্যন্ত আপেক্ষা কওে, লোকসহ রুম দেখলাম। টুইন বেড এসি, ভাড়া ৩৩০০রুপি। ব্রেক ফ্লাট ফ্রি। পাসপোর্ট দিলাম ফটোকপি করল। চধংঢ়ড়ৎঃ নিয়ে চড়ষরপব ঝঃধঃরড়হ এ গিয়ে ঊহঃৎু করতে হবে। একটি ছেলে বলল আপনাদের পুলিশ স্টেশন এ যেতে হবে, বললাম কেন? কাউন্টারে বসা লোকটি বলল আমাদের এখানে এটা নিয়ম। বললাম সাথে কে যাবে, বলল আমরা লোক দিব। বললেন কেন এসেছেন কত দিন থাকবেন এগুলি জানবে। বললাম আমরাতো টিকেট পেলে আজকেই চলে যেতে পারি কলকাতা। না হলে কালকে সকালে। পরের দিন সকাল ৮টায় ঢাকা। তাই আজকেই কলকাতা যেতে পারলে জার্নি সেফ থাকি। রিসিপশনের ঐলোক বলল রুমে যান। ফ্রেশ হয়ে নিন পরে। বললাম ওকে। দুইভাই রুমে গেলাম হোটেলের সাওয়ার নিলাম। রুম মিডিয়াম গোছের। রুমে কফি দিতে কল দিলাম। রুমে দিয়ে গেল। একটু ঘুমিয়ে ১০.১৫তে নিচে নামলাম। ইচ্ছা ছিল প্রথমে পুলিশ স্টেশন, তারপর গুহাটি রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরব। তার পর সেই পৌরনিক কাহিনী যেটা কুমিল্লা লিবার্টি সিনেমা হলে সামনে দেখতাম। যখন ছাত্র ছিলাম স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে আসতাম। সিনেমার সময় ছিল ১২.৩০ থেকে ৩টা। আসতাম সকাল ১০টায়, তারপর যেটা হতো বাদাম কিনতাম। খাইতাম আর হলের সামনে যাদুকর এর যাদু আর ঔষধ বিক্রয়ের শ্রোতা হতাম। একবার তো আমার বুকের মধ্যে পুরোনো হাড্ডি লাগিয়ে কিযে করল। যেই সামান্য সিনেমার দেখার টাকা ছিল তা সব নিয়ে গেল।একটা তাবিজ দিল, আমার নাকি বড় অসুখ হতে পারে। তার মুক্তির তাবিজ। সেই যাত্রায় সিনেমা না দেখেই সেই এলাকার একমাত্র পরিচিত দোকানদার থেকে ভাড়া হাওলাত করে বাসে লালমাই এসে আরো হেটে বাড়ি আসি।

আমাদের সেই হলের সামনের যাদুকর বলতে ছিল যে সে ৩মাস ১৩দিন হেটে কামরুপ কামাক্ষা গিয়ে সাত বৎসর সাত মাস সাত দিন তপস্যা করে এই যাদু শিখেছেন। তাই যে কামরুপ কামক্ষা সেই থেকে মাথায় ঢুুকছে কাউকে বলিনা। দেখি কামরুপ কামাক্ষা কি? যখন ইন্ডিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করলাম তখন আমার ভাই বলল গুহাটিতে দর্শনীয় স্থান আছে। বললাম কোনটি? বলল ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরের গুহাটি এটি একটি বিশাল পাওনা। কারণ এই ব্রক্ষপুত্র হয়েই বিভিন্ন নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিপরীতে কামরুপ কামাক্সক্ষা মন্দির। তৎক্ষনাৎ আমি বললাম এটাতো নাকি অনেক দূরে। সে বলল কে বলেছে আপনাকে। বললাম শুনেছি কবে জানি কিন্তু আসল কথাত আর বলিনা। নিচে রিসিপশনে আসার পর বলে আপনারা ২টায় পুলিশ স্টেশনে যাবেন। বললাম আগে তো বললেন ১০.৩০ মিনিটে যাব। এটা ওদের কথায় পরিষ্কার হলাম সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ওরা একটার আগে অফিসে বসেন না। দুইটায় গেলে ভাল। তারপর কিছু না বলে গাড়ি ভাড়া নিলাম। কামরুপ কামক্ষা যাওয়া ও আসা একত্রে ৫০০রুপি। ২০ মিনিট এর মধ্যে সেই কামরুপ কামক্ষা মন্দিরে পৌঁছালাম। জুতা রাখতে হবে, জমা দিলাম। বলল টাকা লাগবেনা। প্রসাদ নিলেই জুতা রাখতে পারবেন। কত টাকা বলল ১০০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাংতি আছে। বললাম ১৫০ এ কিকি আছে? নেন টাকা ১৫০ টাকায় ৬/৭ টি আইটেম। উপরে চুড়ায় মূল মন্দিরের প্রবেশমুখে গেলাম। হাতে প্রসাদ এর ব্যাগ, খালি পা। প্রবেশ দ্বারে ৬/৭ জন পুলিশ প্রবেশদ্বারে বসে আছে। আশে পাশে লাল লুঙ্গি ও একই কাপড়ের ফতুয়াপরা মন্দিরের সহযোগীদের প্রত্যক্ষ করলাম। পুলিশকে বলে মন্দিরের ভিতরে গেলাম। বানর/কবুতর/ছাগল ইত্যাদির উপস্থিতিসহ পুরো মন্দির ঘুরে দেখলাম। শুধুমাত্র প্রসাদ নিয়ে পূজো করার অংশে ঢুকলাম না। লাল ড্রেস পরা একজন ফিরতে দেখে বলল প্রসাদ পূজা হয়েছে। বললাম জি। বলল ঠিক আছে। মূল মন্দিরের একদিকে ঝবপৎরভরুরহম জড়ড়স ইংরেজিতে লেখা লাল রংয়ে। মাথা ঢুকিয়ে দেখলাম বলি দেয়ার জায়গা। আমরা বাড়ির খুব কাছে আমাদের স্থানীয় বিজয়পুর বাজারে প্রতিমালয়ে দিনভর শিবের খেলা হতো, সেখানে এক কোপ দিয়ে ছোট ছাগল (পাঠা) মাথা থকে শরীর বিচ্ছিন্ন করার দৃশ্য দেখেছি। হঠাৎ ঐকথা মনে পড়ে গেল। পাশ্বেই সুউচ্ছ ঠবংরঃরাষব জবংঃধঁৎবহঃ এর পাশেই আরো কিছু হোটেল আছে। পুরো ভারতবর্ষ ছাড়াও বিশ্বের হিন্দুরাও এই মন্দিরে এসে থাকে। দুই ভাই মিলে প্রসাদ নিয়ে নামার সময় হাতের একটি রিং কিনলাম এবং হাতে পরে নিলাম, বয়সটা তখন ভুলে গেছি। পাশেই দোকান থেকে পেয়ারা কিনে নিলাম এবং গাড়িতে পেয়ারা খেতে খেতে পল্টন বাজার হোটেলের সামনে চলে এলাম। এর মধ্যে শেষ হলো ড্রাইভারের সাথে আলাপচারিতার। বিমানের টিকেট এর খোঁজ খবর নিয়েই পাশেই একজন ডুয়েল এয়ার টিকেট নিয়ে গেলেন। বললাম দুটি টিকেট কলকাতা বলল আজকে ৩-৩৫ এ আছে স্পাইস জেট। ৬৫৫ তে আছে জেট এয়ার। অনেক ভেবে চিন্তে হয়রানি যাই বলিনা কেন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে জেরা হোক তা চাইছিনা। ছোট ভাই বলল স্পাই জেট এ ৩-৫৫ তে ফ্লাইট হলো একটায় বের হতে হবে। তাৎক্ষণিক দুইটি টিকেট কিনে নিই। ওখান থেকে পাঁচ মিনিটের হাটার দূরত্ব গুহাটি স্টেশনে যাই। একটু দেখে ছবি তুলে অটো নিয়ে হোটেলে আসি। ব্যাগ গোছানোই ছিল। সেই ড্রাইভারকে আগেই বলে রেখেছিলাম। সে বলল ৬০০রুপি দিবেন এক ঘন্টার পথ দাদা। রাজি হয়ে গেলাম। হোটেল এ গিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যাগ নিয়ে নিচে রিসিপশনে এসে দাঁড়ালাম। বললাম বিল দেন হোটেল ছেড়ে দিব। বলল কেন দাদা আপনিতো কালকে ১২ টা পর্যন্ত থাকার জন্য পেমেন্ট দিয়েছেন। বললাম কালকের টিকেট থেকে আজকের টিকেট সস্তা এবং ভাল জার্নি হবে বলে মনে হয়। তাই ৩-২৫এর ফ্লাইটে কলকাতা চলে যাচ্ছি। বললো পুলিশ স্টেশনে যাবেন না। বললাম যাবো এয়ারপোর্টে থেকে যাবো, লোকটি হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকল। পরে বলল ঠিক আছে যাওয়া লাগবেনা। এই সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেন। আমি সই করার পর একটু নিচেই বলল ছোট ভাইকে সই দিতে। বললাম এই সই দিয়ে কি করবেন। বলল রিপোর্ট করার সময় সইটি বোর্ডে লাগিয়ে দিব। তখন সই করে আমার ছোট ভাই বলে আপনার বিল দেন পেইড সিল করেন। সই করে দিন বিল। পরে ক্রেডিট কার্ডে বিল পেইড করে পেইড সিল দিয়ে সই করে দিলেন। আমিও ওদের খাতায় সই করে দিলাম। ৪০মিনিটে এয়ারপোর্ট এসে সাথে সাথেই বোডিং পাস নিলাম। কাউন্টার খোলা ছিল। তারপর ভালো অনুভব করলাম। ভাই বলল চলেন খেয়ে নেই। এয়ারপোর্টে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ফ্লাইট ছাড়তে আরো ১.৩০মিনিট বাকী। বাইরে বোর্ড এ দেখি স্পাই জেট ২৩টায় চালিত হবে। আবার দেখলাম ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইট স্পাই জেট। কিন্তু ভালো করে দেখিছি ইনশাআল্লাহ আমাদের ফ্লাইট নয় অন্য রোডের। যথা সময়ে ২০মিনিট পর ফ্লাইট ছাড়ল কলকাতার উদ্দেশ্যে। ইভিনিং ফ্লাই তাই এর পর আর কোন ফ্লাইট এর ব্যবস্থা ছিলনা। কলকাতা নেমে নতুন হোটেলে উঠলাম হোটেল মার্ক, রুম নম্বার ৫১০ । ভাই বলল, জানালা ছাড়া রুম নেয়া যাবেনা। এখানে বলে রাখি কলকাতাতে ওরা যেই হোটেল এ এসে সাধারণত থাকে ভাই ঐ হোটেলে প্রথম গিয়েছিল, কিন্তু কোন রুম ফাঁকা ছিলনা। নতুন হোটেলেও এক রাতের জন্য কোন রুম ফাঁকা নেই। সকালে ঋৎবব ইৎবধপশ ঋধংঃ করলাম। এবং ছোট ভাইসহ ঐদিনের জন্য আবার রুম নিতে হবে। সেটার জন্য দুইটি পাশাপাশি হোটেলে গিয়ে দেখলাম কিন্তু সিট পেলাম না। পরে বুদ্ধি এলো আমরাতো সেই প্রথম দিনের বুড়োর ওখানেই যেতে পারি। ভদ্র লোকের কার্ডটা মানিব্যাগ থেকে বের করে ফোন দিলাম, নাম ছিল মারওয়া। বললাম হ্যালো সাথে সাথে বললো আপনি তো ভাই আমেরিকা থেকে এসেছেন। না । থাকবেন আজকে? বললাম জ্বি । বলল কমিশন বাদ দিয়ে বাকীটা দিবেন। চলে আসুন। বললাম ভোর ৫.৩০ মি কোন নাস্তা লাগবেনা।

হাসি দিয়ে বললাম পূজার কাজ নাই, কত ছাড়বেন। বললো ওতো ২০০ কমে যাবে। চলে আসুন। তবে হাসি দিয়ে বলল মুসলমান দেখে বেঁচে গেলেন, না হলে পূজো না করে যেতে দিতাম না দাদা। ভদ্রলোক ভালো মানুষ। ব্যাগ নিয়ে রুমে এসে ১১টার দিকে বের হলাম। আছে আজকের দিনটাই। বলে রাখি আমার ছোট ভাইয়ের বউ, আমার ভাতিজী/ ভাবী সবাই প্রায়ই কলকাতা আসে। আমার জিজ্ঞাসা কি করে এখানে ছোট ভাই বলল শুধু বাজার করে আর হোটেলে খায়। বাইরে মাটির কাপ এ চা খায়। বলল খাবে নাকি আমি বললাম বয়স হয়েছে। ডায়েট আছে। একবার খেয়ে সমস্যা হলে পুরো জার্নি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই রিক্স নিতে চাইনা। ওর পীড়াপীড়িতে চা খাইলাম। ও খেল মাটির পাত্রে, একটু দুধ দিয়ে চা ঢেলে দিল। আমি বললাম খাবনা। ভাই বলে কোন অসুবিধা নাই ডিসপোজাল কাপ আছে। সে একটি ছোট ডিসপোজাল কাপে করে চা দিল। দুই চুমুকেই শেষ। তবে চা টা চমৎকার। আগে যেটা ভাল লেগেছে চা দিয়ে বিস্কুট দিয়ে খুবই চমৎকার করে খায় । দেখে আবার বাবার কথা মনে পড়ে গেল। আমার বাবা একই ভাবে দুধ চা ও নাস্তা / বেলা টেস্টিং টোষ্ট চুবিয়ে খেতেন। কখনো আমাদের কেউ দাঁড়ানো থাকলে চায়ের এক চুমুক রেখে অর্ধেক বিস্কুট খেয়ে বাকীটা দিয়ে বলত খা। চা খেলাম তবে বিস্কুট খেলাম না। যেটা বলছিলাম । কোথায় আছে দেখে যাই। ভাই বলল- চলেন উভার কল দিল। প্রথমে হাওড়াব্রিজ ব্রিটিশ সময়ের স্থাপত্য নিদর্শন সত্যিই সুন্দর। তারপর গেলাম সেই বিখ্যাত কলকাতা হাওড়া রেলস্টেশন এ। টিকেট কিনে নিলাম ২০রুপি দিয়ে ২টি। ভিতরে ঢুকলাম দেখলাম ৫টি ট্রেন দাঁড়ানো আছে। সুবিশাল ডিসপ্লে সেও আলাদা ডিসপ্লে। রাজধানী কমপ্লেক্স এর পাশেই প্লাটফর্মে দাঁড়ালাম ছবি নিলাম। ইঞ্জিনের ড্রাইভিং সিটসহ যেখানে বসে গাড়ি চালায় সেই অশেংর ছবি নিলাম। পরবর্তীতে গেলাম গার্ডে। লম্বা চুড়া সুদর্শন চেহারার ভদ্রলোক। ব্লেজার কোর্ট পরা। গার্ড এর বেইজ লাগালো পরিচিত হলাম ভদ্রলোক খুশি হলেন। ভাল কথা বললেন এবার গার্ডের রুমের ছবি নিলাম। তারপর চেয়ার কোচ কম্পাউন্টার এর ছবি নিলাম বাইর থেকে। একই ট্রেন বাবা যখন চালিয়েছে এই মটর ইঞ্জিন ও কম্পাউটেন্ট কোনটাই ছিলনা। ছিলো নেড়া গেজ এর লাইন অর্থাৎ সবচেয়ে ছোট চাপা বগি। বাবা অবসরে গিয়েছিল ১৯৬৮ সালে, তাও ৫০ বছরের আগে। কিন্তু আমরা নিজেরা এখনো রেলওয়ে পরিবার ভাবী। জানিনা আমাদের ছেলে মেয়েরা আমাদের কে কিভাবে নেন। আমি বলেছি আমাদের বাবা আমার । তোমার বাবা তোমার……..।
স্টেশনের রেল লাইনের মাঝখান দিয়ে প্রশ্বস্ত রাস্তা যেখানে অনায়েসে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। গাড়ির থেকে নেমেই ট্রেনে চাপতে পারেন। এটা খুব দৃষ্টিনন্দন ছাড়া ও ব্যবহারে মনে হচ্ছে চমৎকার। ভিতরে অনেক লোক পরিবারসহ গ্রুপ গ্রুপ করে বসে আসে। কেউ আবার বাসা থেকে তৈরি করা খাবার নিয়ে একত্রে খাচ্ছে। ফেরত ট্রেন আসবে তিনটার পর। কোন গ্রুপ ১০/১২ জনের মধ্যে ৫/৬ জন ঘুমাচ্ছে। যেন কোন চিন্তা নেই। বেড়াতে যাচ্ছে এবং বেড়াচ্ছে। এই যে প্রশান্তি, তাই মনে এটা দাগ কেটেছে। কোথায় কিভাবে কত সময় কোন অবস্থায় আছে সেটাও জানেনা। ভাল আছেন, শারীরিক মানসিক ভাবে এটাই বড় কথা। এই অনুধাবনটা হাওড়া স্টেশনে না এলে হতোনা।
স্টেশন থেকে বের হয়ে ২নং ঘাট ধরে ৫ টাকা করে টিকেট কিনে নদীর ওপাড়ে চলে যাই। ১৫ মিনিট এর নদী ভ্রমণ। ওপারে গিয়ে উভার কল করে ১৫ মিনিটে চলে যাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এ চমৎকার নির্মাণ শৈলী । ওখান থেকে বের হয়ে টেক্সি করে নিউমার্কেট এলাকায় নামেই খাবার হোটেলে ২ভাই মিলে লাঞ্চ করি। এবার শপিং এ বের হই আমার কেনার একটি আইটেম আছে। যা আমার স্ত্রী রিভার। সেখানেই যায় একটি ইবষষ (ঘন্টা) বিচিত্র রকম দেখে একটি ইবষষ (ঘন্টা) কিনে নিলাম। বললাম আমার বাজার শেষ। নিউমার্কেট এ দেখলাম সেই পুরানো ঐতিহ্য। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ব্যাগ কিনতে দোকানে ঢুকলাম। আমেরিকান স্টাইলের একটি ব্যাগ নিলাম। দোকানে দুই ভাই চেহারা দেখতে একই রকম। জিজ্ঞাস করা মাত্র খুব সুন্দর হাসি দিয়ে বলল জি। পরে বলল এখানে কিন্তু বাজে লোক আছে, আপনাকে জিনিস কেনার জন্য দোকানে নিয়ে যাবে। ওভাবে যাবেন না। ওরা ভালো লোক না। যাই হোক তারপর ওখান থেকে বিখ্যাত শাড়ির দোকান এ গেলাম। সেকি জনসমাগম। ৪৩তলা বিল্ডিং এর কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই। পরে বললাম কিরে ভাই এইজায়গায় এত লোক। বলল এইতো আপনার ভাবী ভাতিজি ছোট ভাইয়ের বউ এই জায়গায় দোকানে ঢুকে আর পাগল পাগল হয়ে কিনে। তবে জিনিস গুলো চোখে লাগার মতো। দাম সম্পর্কে আমার ধারণা নাই। ওখান থেকে বলল চলেন কাছেই বড় মুসলমান এলাকা এবং একটি অনেক পুরোনো সুন্দর নির্মাণ শৈলির একটি মসজিদ আছে। সি এনজি নিয়ে গেলাম। মসজিদ দেখলাম। রাস্তার দুইধারে পাঞ্জাবী সেরওয়ানী কোটি লুঙ্গির ও বোরখার দোকান সারিবদ্ধ ভাবে। একটু হাটতেই দেখি সাদা ধবধবে লুঙ্গি। ভাইকে বললাম চল ২টি লুঙ্গি কিনি। সাদা লুঙ্গি কলকাতা ভ্রমণের স্মৃতির নিদর্শন। সেই তখনই ২টি লুঙ্গি কিনল ২জনের জন্য। তখন সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট। বলল আপনাকে কিন্তু আগে বলিনি। এখানে আমার একটি উদ্দেশ্য আছে- বললাম কি? এখানে একটি খুব পুরোনো খাবার হোটেল আছে মুসলমানদের। রয়েল হোটেল। ১৯০৫ সাল থেকে খাবারের মানের সুনাম রেখে চলছে। আমরা কলকাতা এলেই এখানে বিরিয়ানী ও খাসীর চাপ খাই। চলেন যাই হোটেল দোতলায় উঠতেই সিঁড়ির গোড়ায় দেখলাম খাসির মাংশ পাকাচ্ছে। উপরে উঠলাম হাত মুখ ধুয়ে ডিনার এ বসলাম। চাপতি (পাতলা রুটি) ও খাসির চাপ নিলাম, চমৎকার। যা বলেছে খেতে গিয়ে তার পুরো পেলাম। ভাল লেগেছে। পরে বিল পরিশোধ করে আবার নিউমার্কেট এলাকায় ফিরলাম। সেখান থেকে পার্ক স্টিট এ রিনস্টিইন এ যাওয়ার আগেই ভাই বলল চলেন একটু ওখানে গিয়ে শেষ চুমুক মাটির কাপের চা খেয়ে আসি। না করিনি। চলে গেলাম। মসল্লা দেওয়া চা খেলাম। তবে আবারো ছোট ডিসপোজাল কাপ এ। শেষ দুই চুমুকের মধ্যেই। ও কিছু পান মসলা দেখে কিনল। তার বউয়ের জন্য দুইটা ড্রেস কিনল। আমার ভাতিজার জন্য পাঞ্জাবী কিনল। রাত ৯.৩০টায় এপার্টমেন্টে ফিরলাম। পূজো আছে, তার মাসিও আছে। কিন্তু সেই হাসি মুখ মালিক মারওয়া সাহেব নেই। বাইরে গেছেন। ভদ্র মহিলা বললেন ভাড়ার টাকা আমাদের কাছেই দিলেই হবে। ভাই বলল ভোর ৫টায় আমরা ছাড়বো। মহিলা বলল কল করে দিব। অসুবিধা হবেনা রাত্রিতেই বিল দিয়ে দিলাম। ৫.৩০ মিনিটে রেডি হয়ে উবারে করে এয়ারপোর্টে চলে এলাম। পূজা ও তার মাসির সাথে দেখা হলনা। দরজা ভিতর থেকে লক ঘুরিয়ে চলে এলাম। এয়ারপোর্টে এসে বোর্ডিং পাশ করে ইমেগ্রেশন পাশ করে লাউঞ্জে বসলাম। দুভাই মিলে পনির রোল ও কফি খেলাম।
যথাসময়ে বাংলাদেশ বিমানের নির্দিষ্ট ফ্লাইট ৮টায় ছেড়ে ৯.১০ এ ঢাকা এয়ারপোর্ট অবতরণ করলাম। ভাতিজাকে কল দিলাম । বিশ মিনিটের মাথায় কেনোপি -২ এ চলে এলো এর মধ্যে আমরাও কাষ্টমস পেরিয়ে বের হয়ে এলাম। এখানে বলে রাখা ভালো যাতায়াত সুবিধার জন্য পিঠে বহন করা লাগিছ ছাড়া আর কোন লাগিছ ছিলনা। তাই প্রথম থেকেই কোন এয়ারপোর্ট লাগিছ এর অপেক্ষা প্রহর গুণতে হয়নি।
মিরপুর ডি ও এইচ এস এ ছোট ভাইয়ের বাসায় আসতে সময় লাগল ১৫ মিনিট। বাসায় ঢুকে ডাইনিং টেবিলে দেখলাম হরেক রকমের বাহারী নাস্তা সাজানো । ছোট ভাইয়ের স্ত্রি জোলিকে বললাম এতকিছু কেন করেছ। ছোট ভাইয়ের বউ বলল মেঝো ভাই কিছুইতো করিনি। এতো শুধু নাস্তা আর তেমন কি? আপনারা যে কত বড় কাজ করে এসেছেন তা কিছু করে হলেও আপনাদের সাথে একাত্ম হলাম। নাস্তা খেতে খেতে আবার চিন্তা করতে লাগলাম। এত দিনের স্বপ্নের ভ্রমণ তো শেষ। এখন পরের আরেকটি নতুন ভ্রমণের চিন্তা করে ফেলি। উন্নত দেশের প্রায়ই মানুষই প্রতি বৎসর কাজের ছুটিতে এবং অবসরে যাওয়ার পর একটি মাত্র বিষয় কাজ করে সেটা হলো দেশ ভ্রমণ। তারা এজন্য আগেই একটি মনস্থির করে। সেটা আমাদের এই এশিয়া মহাদেশেও প্রচলন হচ্ছে। এই তো আমরা তো বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত। ৫ দিনের ভ্রমণ করে এলাম। এখন পরবর্তী আকর্ষণ নতুন কোন জায়গা, কোন নতুন সমাজ, কোন নতুন কৃষ্টি দেখতে যাব হয়তো।