বৃহস্পতিবার ২৮ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


তামিমের কুমিল্লার কাছেই বিপিএলের শিরোপা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
08.02.2019

ইনিংসের ১৩তম ওভারে কাইরন পোলার্ডের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝিতে রনি তালুকদারের রান আউটটিই কি তবে টার্নিং পয়েন্ট ম্যাচের? নাকি তার আগে উপুল থারাঙ্গার ফেরা? কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ১৯৯ রানের জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সুনীল নারাইন রান আউট ঢাকা ডায়নামাইটসের জন্য বড় ধাক্কা হলেও সেটি দুর্দান্তভাবেই সামলে উঠেছিলেন রনি ও থারাঙ্গা। মাত্র ৯ ওভারের মধ্যে দুজনের ১০২ রানের জুটি ঢাকাকে রেখেছিল জয়ের পথেই। কিন্তু দ্বাদশ ওভার থেকেই ম্যাচটা নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে কুমিল্লা বিপিএলের শিরোপাটা জিতে নিল দারুণভাবে।
প্রথমে লঙ্কান ব্যাটসম্যান থারাঙ্গা ও পরে রনির ফেরার ক্ষতি সামলানোর জন্য ঢাকার কাছে যথেষ্ট অস্ত্র থাকলেও সেগুলি ঝলসে ওঠেনি। সাকিব আল হাসান, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেলরা রনি-থারাঙ্গার তুলে দেওয়া গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা ৮ উইকেটে ১৮২ রানে থামলে কুমিল্লার সঙ্গে ব্যবধানটা থাকল ১৭ রানের।
রনি আর থারাঙ্গা যখন তীব্র গতিতে রান তুলছেন, ঠিক তখন ‘অন্যরকম’ কিছুরই দরকার ছিল কুমিল্লার। একটি দারুণ ক্যাচ, একটি রান আউট কিংবা কোনো একটি দুর্দান্ত ভালো ওভার। দলের পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ওয়াহাব রিয়াজের করা ইনিংসের দ্বাদশ ওভারটি ছিল তেমনই। বলতে গেলে ঢাকার সর্বনাশের শুরুটা ঠিক তখন থেকেই। গোটা ওভারে রান এল মাত্র ১, তামিমের প্রায় ২০ গজ দৌড়ে ধরা দুর্দান্ত এক ক্যাচ। মুহূর্তেই ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। প্রথম বলেই সাকিব আকাশে বল তুলে দেন। ক্যাচটি কঠিন ছিল, তামিম সেটি সম্ভব করেন। বাকি বলগুলি রিয়াজ করলেন দুর্দান্ত। অথচ, এর আগের পাঁচ ওভারে রান এসেছে যথাক্রমে ১০, ৮, ১০, ১১, ১০। ষষ্ঠ, পঞ্চম, চতুর্থ আর তৃতীয় ওভারে এসেছে ১২, ১৫, ১৫ ও ১৬। এর মাঝেই অবশ্য থিসারা পেরেরার বলে ২৭ বলে ৪৮ রান করে নবম ওভারে আউট হয়েছেন থারাঙ্গা।
১২তম ওভারে সাকিব আউট হওয়ার পর ঢাকার ভরসা হয়ে অনেকেই ছিলেন। রনি তো দারুণ একটা ফিফটি করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, দুই ক্যারিবীয় কাইরন পোলার্ড আর আন্দ্রে রাসেলরাও ছিলেন। তবে ম্যাচের ১৩তম ওভারে আবারও সেই ‘অন্যরকম’ কিছুতে সওয়ার কুমিল্লা। এবার দ্রুত রান নিতে গিয়ে পোলার্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট ব্যাট হাতে আজ ঢাকার হয়ে সেরা পারফরমার রনি। দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের আগে রনি ৩৮ বলে করেছিলেন ৬৬; ইনিংসটিতে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কার মার।
১৪তম ওভারে আউট রাসেল। বোলার সেই থিসারা পেরেরা, ক্যাচ নেন ওয়াহাব। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যাওয়া বলটি লুফে নেওয়ার জন্য মিড অফে ওত পেতেই ছিলেন পাকিস্তানি পেসার। এরপর কাইরন পোলার্ডও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এক ওভার পরেই ওয়াহাবের বলে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন এই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। আর কি আশা ছিল! দর্শকেরা একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা রেখেছিলেন নুরুল হাসানের ওপর। ছিল শুভাগত হোম চৌধুরীর ওপর। কিন্তু এই দুই দেশি ক্রিকেটারের ব্যাট কথা বলেনি। ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গেই তাল মেলাতে পারেননি এ দুজন।
কুমিল্লার বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম দিকে সাইফউদ্দিন কিংবা মেহেদী হাসানরা খরচে ছিলেন। তবে সাইফ ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। শুরুতে খরচে ছিলেন ওয়াহাব রিয়াজও। প্রথম ওভারে ১৫ রান দেওয়া ওয়াহাব অবশ্য যেভাবে ফিরে এসেছেন, সেটি ছিল এক কথায় দুর্দান্ত। ওয়াহাব শেষ ৩ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ১৩ রান, উইকেট পেয়েছেন ৩টি। থিসারা পেরেরা ৪ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।
দুর্দান্ত ১৪১ রানের পর এ ম্যাচটা কুমিল্লা হেরে গেলে হয়তো আফসোসের অন্ত থাকত না তামিম ইকবালের। কিন্তু ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতেছেন তারা। বিপিএলে নিজের প্রথম শিরোপাটা হাতে নিয়ে দারুণ একটা চিত্রনাট্যের পরিণতি দিলেন তিনি। দেশি তারকার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শেষ হলো বিপিএলের ষষ্ঠ আসর। ওয়াহাব রিয়াজ, থিসারা পেরেরা কিংবা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা দুর্দান্ত বোলিংয়ে কুমিল্লাকে জিতিয়ে সে চিত্রনাট্যে পার্শ্ব চরিত্র হিসেবেই থাকলেন।
অভিনন্দন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস!