শুক্রবার ১৯ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


টুংটাং শব্দে মুখর কুমিল্লার কামারপাড়া


আমাদের কুমিল্লা .কম :
21.08.2018

মাহফুজ নান্টু: আজ বাদে কাল কোরবানীর ঈদ। মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলিম সম্প্রদায় পশু কোরবানী করে থাকেন। আর এমন উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মত এ বছরও কুমিল্লা চকবাজারসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কামারপাড়ায় টুংটাং শব্দে মেতে আছে। সেই সাথে চলছে পশু জবাই করা ও মাংশ কাটার অন্যতম অনুষঙ্গ দা-ছুরি-চাপাডি,বডি বিকিকিনি ও পুরনোগুলোতে শান দেয়ার কাজ।

কুমিল্লা চক বাজার গরুর বাজারের পাশে গিয়ে দেখা যায় টুং টাং শব্দে মুখরিত কামার পট্টি। আগে তৈরী দা-ছুরি-চাপাডি বিক্রির পাশাপাশি নতুন আরো তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। গত এক সপ্তাহ ধরে রাত দিন সমান তালে তাদের ব্যস্ততা চলছে। গতকাল সোমবার সকালে নগরীর চকবাজার কামার পট্টিতে সরেজমিন গিয়ে নতুন দা, ছুরি, বটি চাপাডি তৈরির পাশাপাশি গ্রাহকদের নিয়ে আসা ঝং ধরা দা-ছুরি শান দেয়ার কাজও চলছে সমান তালে। ঈদের মাত্র একদিতন বাকি বলেই হয়তো কামাড়দের দম ফেলবার ফুসরৎ নেই।

চক বাজার কামাড়পট্টির মূল্য তালিকায় অনুযায়ী দা, বটি ঝালাই দিতে মজুরি ৪০ থেকে ১২৫ টাকা। লোহার গুনগত মান অনুযায়ী ছোট ও মাঝারী আকারের ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকা। মাংশ কাটার বডি ৬শ থেকে ১২শ টাকা,চাপাডি হাল্কা ২৫০,ভারী সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। গরু জবাই করার বড় ছুরি ৩৫০ থেকে ৬শ টাকাও বিক্রি করা হচ্ছে।
কামার রঞ্জিত কর্মকার জানান, লোহার গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে দা-চাপাতি ছুরি বিকিকিনি হয়। লোহার মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ জাহাঝ ভাঙ্গা ও বাসের স্প্রিংয়ের লোহার ছুরি-চাপাডি-বডি।
তবে আগের তুলনায় লোহার দাম বেড়ে যাওয়া ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে তাদের কাংখিত মুনাফার বিষয়ে অনেকটা শংকা রয়েছে বলে জানান রঞ্জিত কর্মকার।

বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কোরবানীর ঈদে ছুরি চাপাডি-বডি বেশী বিক্রি হয়। আবার অনেকে পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো শান দেয়ার জন্য নিয়ে আসেন।
গরু জবাইয়ের জন্য বড় ছুরি কিনেছেন সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল আলীম। তিনি জানান, সাড়ে ৮ টাকা দিয়ে কিনেছেন ছুরিটি। পুরো গ্রামের সকল পশু জবাই করা হবে। ভালো মানের ছুরি না হলে পশু জবাইয়ে সমস্যা হবে। তাই কামাড়কে বলে জাহাঝ ভাঙ্গা লোহার তৈরি ছুরি কিনেছি। চকবাজার কামার পট্টির প্রতিটি দোকানেই গড়ে ৫ থেকে পনের হাজার টাকার বিকিকিনি চলছে। আগে কোরবানীর ঈদে লক্ষাধিক টাকা মুনাফা গুনলেও বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানীও দা-ছুরির মত পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করার ফলে তার প্রভাব পড়েছে কামাদের উপর।

চক বাজার কামাড়পট্টির অন্তত ১০ জন কামার জানান, আগে পুরো বছরজুড়ে যে পরিমান দা-ছুরি বিক্রি করতে পারতাম, তখন শুধু কোরবানীর ঈদেই তার দ্বিগুনের চেয়ে বেশী বিক্রি করতাম। মুনাফাও হত বেশ ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা ভালো না। যার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন লোহার দাম বৃদ্ধি,শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন কোম্পানী এখন ছুরি চাপাডি বিক্রি করায় গ্রাহক সংখ্যাও আগের তুলনায় কমে গেছে।
বংশ পরম্পরায় পেশাটির প্রতি ভালোবাসা অনুভবের কারণে অনেক কামারই এখনো স্বল্প মুনাফায় ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে দিলিপ ও মল্লিক কামার জানান, বলা যায় বাপ-দাদার পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

নগরীর চক বাজার কামারপট্টি ছাড়াও রানীর বাজার, পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা বাজার এবং জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া , মুরাদনগর, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কামারদের অবস্থা প্রায় একই।