শনিবার ২০ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


ভাল নেই ন্যাপ নেতা মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন


আমাদের কুমিল্লা .কম :
29.11.2017

শাহাজাদা এমরান।।


মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ( ন্যাপ) কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিন জেলা ন্যাপের সভাপতি মো. জাকির হোসেন এখন আর আগের মত ভাল নেই। বয়সের ভাড়ে ক্রমেই নুহ্য হয়ে যাচেছন তিনি। বাসা বাঁধতেছে বিভিন্ন রোগ-শোক। সব সময়ই থাকতে হচেছ চিকিৎসকের পরামর্শের ছায়াতলে। তার শরীর যে আর চলছে না তা তাকে দেখেই বুঝা যায়। তবুও সময় সময় চেষ্টা করেন মানুষিক ভাবে সতেজ সজিব থাকার। থাকেনও তেমনি। শহরময় আগের মত ঘুরে বেড়ানো না হলেও গুরুত্ব অনুধাবন করে সময়ে সময়ে ঘর থেকে বের হন। জীবন সায়াহ্ণে উপনীত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দু:খ একটাই, সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। কিন্ত জীবনের এই পড়ন্ত বেলায়এসে হিসাব যে আর মিলছে না- বলে জানান তিনি। সহপাঠি সহযোদ্ধারাও এখন আর খোঁজ খবর নেন না বলে জানান তিনি। সম্প্রতি দৈনিক আমাদের কুমিল্লার পক্ষ থেকে কথা বলি সাবেক রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা ও বর্তমানে ন্যাপ নেতা মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেনের সাথে।।
মোঃ জাকির হোসেন পিতা মৃত মোঃ আলী হোসেন, মাতা মৃত ফাতেমা খাতুন। ১৯৫০ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমানে একই জায়গায়র দৃষ্টি নামক বাসায় তার শেষ বেলা কাটে। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীধারী জাকির হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ীও বটে। তার রয়েছে বিশাল ও বর্ণ্যাঢ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন। দেশের হয়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে করেছেন বিদেশ ভ্রমণও। এ জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মানও। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে তার ছাত্ররাজনীতি শুরু হয়। তার উল্লেখযোগ্য রাজনীতিক পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে, তিনি ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহন করেন ।১৯৬৫-৬৬ সালে পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখার সভাপতির পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের জুন মাসে প্রনীত ৬ দফা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক-এর দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬৭-৬৮ বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-র রিকুইজিশন কাউন্সিলর-এর কাউন্সিলর হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালে কুমিল্লা শহর ন্যাপ-এর সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে একই সময় কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ূব বিরোধী ১১ দফা গণআন্দোলনে কারাবরণ করেন। ১৯৭০ সালে কুমিল্লা জেলা ন্যাপ-এর দফতর সম্পাদক পদে নির্বচিত হন। ১৯৭০ সালে কুমিল্লা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন-এর বিশেষ গেরিলা বাহিনীর কুমিল্লা জেলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে কুমিল্লা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে নির্বচিত হন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর কুমিল্লা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কুমিল্লা জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে ত্রিদলীর ঐক্যজোটের কুমিল্লা জেলার নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৪-৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪-৮২ সালে বাঙালির দু’টি অস্থির সময় ১৯৭৫ পরবর্তী এবং ১৯৮৭- তে মোস্ট ওয়ান্টেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৩-৯০ বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কুমিল্লা জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৮৩-৯০ কুমিল্লার ৮দলীয় জোট ও ১৫ দলীয় জোটের প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কেন্দীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ন্যাপ কুমিল্লার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (পি.ডি.এফ) কুমিল্লা জেলা কমিটি আহবায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। বর্তমানে ১৪ দলের কুমিল্লা জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক তিনি। মহা ঐক্যজোটের কুমিল্লা জেলার যুগ্ম আহবায়ক ও জাকির হোসেন। বর্তমানে জাতীয় স্বার্থে তেল, গ্যাস, বন্দর, বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির কুমিল্লা জেলা আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডেও তিনি ব্যাপক ভুমিকা পালন করে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে, সভাপতি, দৃষ্টি, লাকসাম রোড, কুমিল্লা। কাউন্সিলরও আজীবন সদস্য বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও গণপাঠাগার, কুমিল্লা। সহ-সভাপতি, টমছমব্রীজ কবরস্থান কমিটি, কুমিল্লা। প্রাক্তন সহ-সভাপতি শিল্পকলা একাডেমী, কুমিল্লা। কার্যকরী কমিটির সদস্য, কুমিল্লা, ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স, কুমিল্লা, – অপরাধী সংশোধন ও পুণর্বাসন সমিতি, কুমিল্লা, নাটাব (বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি), রোগী কল্যাণ পরিষদ, জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা। প্রাক্তন কার্যকরী কমিটির সদস্য – কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। আজীবন সদস্য- রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কুমিল্লা জেলা,- বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, কুমিল্লা- দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ও অন্ধকল্যাণ পরিষদ, কুমিল্লা, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, কুমিল্লা, রোগী কল্যাণ পরিষদ, জেনারেল হাসপাতাল। সদস্য, নজরুল পরিষদ, কুমিল্লা, কালচারাল কমপ্লেক্স, কুমিল্লা, মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী সংসদ, কুমিল্লা। হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা। উপদেষ্টা, খেলাঘর, কুমিল্লা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি, কুমিল্লা। স্বাধীনতা সংসদ (সাংস্কৃতিক সংগঠন ),বিনয় সাহিত্য সংসদ, কুমিল্লা।সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বশান্তি পরিষদ, কুমিল্লা। সাবেক সহ-সভাপতি বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি, কুমিল্লা, ন্যাপের মুখপত্র প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সাপ্তাহিক নতুন বাংলা কুমিল্লা জেলার নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। তিনি ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের আমন্ত্রণে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
কেমন আছেন আছেন জাকির ভাই ? জানতে চাইলে দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে ক্ষনিক আকাশের দিকে তাকান। মনে মনে ভাবলাম জীবনের হিসেব মেলাতে চেষ্টা করছে তিনি। কিন্তু পারছেন না যে। পরক্ষনেই বললেন, এই তো আছি। বেশ ভাল আছি। কোন রকমে বেঁচে আছি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী মো. জাকির হোসেনের সাথে কয়েকটি সংগঠনে এক সাথে কাজ করি আমি। তিনি ভেবেছেন হয়তো সাংগঠনিক কাজেই এসেছি । বললেন, বল সাংবাদিক কোন প্রোগ্রাম আছে কি না। আমি বিনয়ের সাথে জানালাম, জাকির ভাই, আপনার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে এসেছি। জানতে এসেছি আপনার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা। শুনতে চাই মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপম গল্প।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জাকির হোসেন জানান, তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে শ্রমিকদের নিয়েও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। হালিমা চিশতিয়া ও ময়নামতি টেক্্রটাইল মিলে শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। অধিকার হারা শ্রমিকদের সংগঠিত করে শ্রমিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন অসীম সাহসিকতার সাথে। এক সময় যখন কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলে সেই সময়ে জাকির হোসেন ছিলেন কুমিল্লা জেলার একজন সক্রিয় সদস্য।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ছাত্র আন্দোলনের স্বর্ণ যুগের কথা মনে করতে গিয়ে জাকির হোসেন জানান, ১৯৬৬-৬৭ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিল আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের মোস্তফা কামাল আর জিএস ছিল ছাত্রলীগের সফিকুর রহমান। ১৯৬৭-৬৮ সালে ভিপি ছিল ছাত্র ইউনিয়নের আবু তালেব আর জিএস ছিল ছাত্রলীগের অহিদুর রহমান।১৯৬৮-৬৯ সালে ভিপি ছিল ছাত্র ইউনিয়নের মো. ওমর ফারুক আর জিএস ছিল ছাত্র ইউনিয়নের মাসুদুর রহমান। প্রতিটি নির্বাচনেই ছাত্র ইউনিয়নকে জয়লাভ করার জন্য অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন বলে জানান তিনি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরন করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা ছিলেন তৎকালীন ধামরাই থানার সার্কেল অফিসার ( উন্নয়ন)। আমরা ৩ ভাইই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করি আমাদের বাবার অনুমতি নিয়ে।
ন্যাপ নেতা জাকির হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ইয়াহিয়া বিরোধী আন্দোলন আমরা শুরু করি। ২৫ মার্চ রাতে যখন পাক বাহিনী ঢাকায় হত্যাযজ্ঞা শুরু করল তখন ঐ রাতেই খবর পেয়ে আমরা কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে ফেলি। যাতে হানাদার বাহিনীর গাড়ি এ দিকে না আসতে পারে। পরে আমরা এ ব্যারিকেড টমছম ব্রীজ পর্যন্ত বর্ধিত করি। ২৬ মার্চ কুমিল্লা শহরের ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ এর পাশে সমর বাবুর বাড়িতে আমরা সবাই পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্য একত্রিত হই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আমি, কমরেড আবদুল হাফেজ, হেদায়েত উল্লাহ, মো. ওমর ফারুক, সমরচন্দ্র মজুমদার, প্রয়াত হুমায়ুন কবীর মজুমদার ও এড. গোলাম ফারুক প্রমুখ। শর্মা কেমিক্যালে চিঠি পত্র টাইপ করার একটি মেশিন ছিল আমরা সেটা নিয়ে আসি। এভাবে পুরো মার্চ মাসের এই শেষ কয়েকদিন আমরা কুমিল্লায় ছিলাম। এক পর্যায়ে এপ্রিল মাসের শুরুতেই আমরা প্রশিক্ষন নিতে চলে যাই।প্রথমে কাজি মমতাজের বাড়ি আদর্শ সদর উপজেলার বসন্তপুর যাই। এখানে কোটেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আমরা প্রশিক্ষন নেই। তখন এখানে প্রশিক্ষন দিয়েছেন ক্যাপ্টেন রেজা। তখন এখানে উপস্থিত ছিলেন, খোরশেদ আলম এম এন এ এবং রশিদ ইঞ্জিনিয়ার। এখানে প্রশিক্ষণ চলাকালীন আমরা অহিদুর রহমানের বাড়িতে খেতাম ও ঘুমাতাম কাজী মমতাজের বাড়িতে। পরে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। এই গেরিলা বাহিনীতেও আমি প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। ভারতের আসাম রাজ্যের তেজপুর ক্যাম্পে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রশিক্ষনও গ্রহন করি। পরে ভারত থেকে এসে আমরা কুমিল্লার চান্দিনা, বরুড়া, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। – এই গ্রুপে আমি ছিলাম কমান্ডার। আর মুরাদনগর, দেবিদ্বার, হোমনা ও বুড়িচং এলাকায় আমাদের কমান্ডার ছিলেন, মোস্তাফিজুর রহমান।
এখানে আমাদের একটা গৌরবজনক কথা বলে রাখতে চাই। চান্দিনার হারং এর পানিপাড়া নামক স্থানে পাক বাহিনীর সাথে আমাদের যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল সেখানে আমরা ১১ জন পাক হানাদার বাহিনীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরই মধ্যে হানাদারদের কাছ থেকে কুমিল্লা মুক্ত হয়ে যায় । পরে চান্দিনা যুদ্ধ করে যখন আমি আর প্রয়াত সৈয়দ আহমেদ বাকেরের নেতৃত্বে আমরা শাষনগাছা হয়ে শহরে প্রবেশ করার চেষ্টা করি তখন আমাদের বাধা দিয়ে বলা হয় অস্ত্র নিয়ে শহরে প্রবেশ করা যাবেনা। তখন আমরা জেলা প্রশাসক অফিসে গিয়ে অধ্যাপক খোরশেদ আলমকে জানালাম আমাদের বাধা দেওয়া হচেছ। আমরা অস্ত্র নিয়েই শহরে প্রবেশ করতে চাই , আপনি ব্যবস্থা করেন। পরে আমরা শহরে প্রবেশ করি।
যে উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার এই ৪৬ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ন্যাপ নেতা জাকির হোসেন বলেন, এ কথা আজ আমার বলতে মোটেও দ্বিধা নেই যে, যে চেতনা ও আদর্শ নিয়ে জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজ এতগুলো বছর পরেও আমাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা মুল ৪টি নীতিকে ধারণ করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের সেই মুলনীতি বা চেতনা হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায় বিচার বৈশম্যহীন একটি মুক্ত সমাজ বিনির্মার করবো বলেই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।
জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে আপনার চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ৭১ এর অগ্নিঝড়া দিন গুলোতে রাজপথ কাঁপানো নি:সন্তান এই বীর সেনানী জানান, ২০০৮ সালে আমার স্ত্রী অধ্যাপিকা শরমিন কাদের মারা যাওয়ার পরেই আমি একাকিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। এখন আর আমার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। দিন দিন বয়স বাড়ছে। রোগ শোকও কাবু করছে। তারপরেও চলে যাচেছ জীবন। এখন যারা রাজনীতি করে সমাজ নীতি করে তাদের কাছে তো আমরা অচল। অথচ এই তাদেরকে আজকের এই মুক্ত স্বাধীন দেশে রাজনীতি সমাজনীতি করার জন্যই তো জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি আমরা।অথচ তারা আজ আমাদের খবর নেয় না। কেউ কেউ হয়তো নেয়ার চেষ্টা করে কেউবা এড়িয়ে যায়। এতে আমার কোন দু:খ নেই, নেই কোন গ্লানি। কবে কখন আল্লাহ নিয়ে যায় বলতে পারি না। স্বাস্থ্যের অবস্থাও তেমন ভাল নেই। শুধু এতটুকু বলতে চাই,আমরা যেন গুরুজনকে শ্রদ্ধা করতে শিখি আর দেশের প্রতি মমত্ববোধ রাখি।