তিন তালাক প্রথা যদি সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়, মুসলিমদের বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন আনবে কেন্দ্র। আজ শীর্ষ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি এ কথা জানিয়েছেন।

তিন তালাক বাতিল হলে মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদ কোন পথে হবে, সে প্রশ্ন উঠছিলই। আজ মুকুল আশ্বাস দিয়ে বলেন, কেউ বঞ্চিত হবে না। নতুন আইন আসবে। আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ প্রশ্ন তোলেন, সেটা এখনই নয় কেন? রোহতগি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক অধিকারের রক্ষাকর্তা। সেখানে তালাক খারিজ হলে তবে আইন আসবে।

সাংবিধানিক বেঞ্চে আজ মুকুল সওয়াল করতে নেমে রীতিমতো ঝোড়ো ‘বোলিং’ করেন। শুধু তালাক-এ-বিদ্দাত বা তিন তালাকে আটকে না থেকে তালাক-এ-এহসান ও তালাক-এ-হাসন নামে অন্য যে দু’টি প্রথায় তিন মাস সময় নিয়ে বিচ্ছেদের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোও তুলে দেওয়ার আর্জি জানান। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর তাতে মন্তব্য করেন, ‘‘আপনি পুরো হোয়াইটওয়াশ করে ফেলতে চান!’’ তালাকের তিনটি প্রথাই মৌলিক অধিকারের বিরোধী বলে দাবি করে রোহতগি বলেন, ‘‘একটা বল-এই তিনটি উইকেট চলে যায়।’’ শুনে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আপনি  তো একই সঙ্গে ফাস্ট, স্পিন, চায়নাম্যান বোলিং করছেন।’’

রোহতাগি দাবি তোলেন, শীর্ষ আদালত মুসলিম সমাজের বহুবিবাহ ও নিকাহ-হালালা প্রথা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিক। প্রধান বিচারপতি অবশ্য বলেন, সময়ের অভাব। বহুবিবাহ, নিকাহ-হালালা নিয়ে আলোচনা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকবে।

ব্যক্তিগত আইনে রাষ্ট্র কতটা নাক গলাতে পারে, সে প্রশ্ন উঠেছিল। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, সংবিধানই ব্যক্তি আইনকে রক্ষাকবচ দিয়েছে। সে প্রসঙ্গে রোহতগির যুক্তি, ব্যক্তি আইনও সংবিধান সম্মত হওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে হিন্দু সমাজের বহু প্রথাতেও মহিলাদের প্রতি বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি করেন সিব্বল।  তিনি বলেন, মূল সমস্যাটা পিতৃতন্ত্রের। বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান প্রশ্ন তোলেন, বিবাহ অনুষ্ঠান ধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত। সরকার যা বলছে, তা করতে হলে তো হিন্দু বিবাহ আইন বা সমগোত্রীয় সব ব্যক্তি আইনই বাতিল করে দিতে হয়! শুধু স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট চালু রাখতে হয়! রোহতগি উত্তরে বলেন, ‘‘সেটাই হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি।’’ সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘হিন্দু, জৈন, পার্সি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি আইনে অনেক বেশি সংস্কার হয়েছে, অনেকটা সংবিধানসম্মত হয়ে উঠেছে।’’

প্রধান বিচারপতি আগেই বলেছেন, রোহতগি যদি প্রমাণ করতে পারেন, তালাকের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই, তবে মৌলিক অধিকার নিয়ে চুলচেরা বিচারের প্রয়োজন হবে না। রোহতগি দেখিয়েছেন, তিন তালাকের সঙ্গে কোরানের সম্পর্ক নেই। সিব্বলও তা মেনেছেন। কিন্তু তাঁর যুক্তি, কোরান ছাড়াও হাদিস ও মুসলিম আইনের বিভিন্ন চিন্তাধারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ফলে তালাকও তা-ই।

তথ্যসূত্র: আনন্দ বাজার