শনিবার ২০ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » sub lead 3 » বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা নয় চিকিৎসা প্রয়োজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় কুমিল্লার


বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা নয় চিকিৎসা প্রয়োজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় কুমিল্লার


আমাদের কুমিল্লা .কম :
14.05.2017

# আসুন, তাদের দিকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করি
শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা ।।
প্রতিবন্ধী শিশুদের যথেষ্ট মেধা আছে। তবে যথাযথ পরিচর্যার অভাবে তাদের  প্রতিভা বিকশিত হতে পারে না। বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা নয়। সার্বিক সহযোগিতা পেলে তারাও দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিয়োাজিত হতে পারে। এমনি প্রত্যয় নিয়ে গড়ে উঠে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় কুমিল্লা। কুমিল্লা নগরীর সিটি পার্ক সংলগ্ন ধর্মসাগরের উত্তরপাড়ে ওস্তাদ আলীউদ্দিন খাঁর সড়কে এটি অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে এটি কুমিল্লায় মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডা. সৈয়দ আহমেদ ও আশরাফ আলী চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি তার যাত্রা শুরু করে। সমাজের অবহেলিত ও অসহায় ছেলে-মেয়েদের কুমিল্লার একমাত্র  এই বিদ্যাপিঠটি আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সব কিছুতেই নাই। এই নাই-নাই এবং নাই এর কারণে প্রতিবন্ধী কোমলমতী শিশুদের পড়া লেখার সার্বিক পরিবেশ আজ বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। এদের পড়ালেখা চালিয়ে মানুষ করে সমাজের মূল স্তরে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। সকলের সহযোগিতা ছাড়া পিছিয়ে পড়া অসহায় এই কোমলমতি শিশুদের জন্য কল্যানকর কোন কিছু করা সম্ভব হবে না।
একটি সুস্থ শিশু সকলেরই কাম্য। পরিবারে এমন কিছু শিশু দেখা যায়, যাদের শারিরীক গঠন স্বাভাবিক নয়, হাত বা পা নাই। কানে শোনে না। ফলে কথা বলতে পারে না। অনেকে চোখে দেখে না বা কম দেখে। বুদ্ধিমত্তা কম, ফলে সামাজিক আচরণ ও ভাব বিনিময় ঠিকমতো করতে পারে না। এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। এই প্রতিবন্ধী শিশুরা আমাদের সমাজেরই একজন, তাই এদের সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে ধারনা থাকলে তাদের প্রতি সবার ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে, প্রতিবন্ধী শিশুটিও নিজেকে সকলের থেকে আলাদা বা অসহায় মনে করবে না।
আমরা সহজেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের সনাক্ত করতে পারি। যেমন তাদের হাঁটা, চলা, বসা, কথা বলা ইত্যাদি বিকাশগুলো বয়সের তুলনায় কম হয়, কোনো বিষয়ে শিশু মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না,   কোনো নির্দেশনা সহজে বুঝতে পারে না। একই নির্দেশনা বারবার দিতে হয়,শিশু কোনো কাজ করতে পারে না। এমনকি মল-মূত্র ত্যাগের শিখণও সহজে গ্রহণ করতে পারে না, সুক্ষ্ম কোনো কাজ করতে পারে না।  অবাঞ্চিত আচরণ করে, সমবয়সীদের সাথে মিশতে পারে না। সামাজিক আচরণ ঠিকমতো প্রদর্শন করতে পারে না এবং  ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যায় বা খিচুনি হয়।
যে পরিবারে একজন  প্রতিবন্ধী  শিশু রয়েছে সে পরিবারের সদস্য বিশেষ করে বাবা-মায়ের জন্য প্রয়োজন বিশেষ সেবা-পরামর্শ। তারা যেন প্রতিবন্ধী  শিশুটিকে নিজেদের বোঝা মনে না করেন অথবা শিশুর প্রতিবন্ধিতা লুকিয়ে না রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও বিশেষায়িত স্কুলের সাহায্য গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সকলেরই সচেতনতা প্রয়োজন। কুমিল্লার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী  শিশুদের নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।  আসুন আমরা সকলেই সচেতন হই- এগিয়ে আসি এই একটু পিছিয়ে পড়া  প্রতিবন্ধী  শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়,কুমিল্লার এই স্কুলটি চলছে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে।   সোসাইটি ফর দি ওয়েল ফেয়ার অব্ দি ইন্টেলেকচুয়ালি ডিস্এভেল (সুইড-বাংলাদেশ ) এর কুমিল্লা জেলা কমিটি এর  ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে। সুইড বাংলাদেশের পরিচালনায় সারা দেশে আরো বেশ কিছু প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু আছে।
সমস্যা জমতে জমতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় কুমিল্লা এখন এমন হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের আগে প্রতিষ্ঠানটিকেই নিতে হবে চিকিৎসালয়ে। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানে কি নেই না বলে বলতে হবে কি আছে এখানে। নেই প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশুনা করার উপযোগী বসার চেয়ার-টেবিল,  রান্নার ক্লাশ করার জন্য নেই গ্যাস সংযোগ , নেই ব্লাক বোর্ড. ঘন্টা, ঘড়ি, নাচের ক্লাশের সকল পর্যায়ের সামগ্রি,ড্রইয়িং এর সামগ্রি,  অটিজম বাচ্চাদের জন্য ক্লাশ রুম, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, মেরামতের অভাবে ছাদ দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি,বাচ্চাদের আনা নেওয়ার জন্য নেই গাড়ি,ক্লাশ রুম সংকট তো আছেই। আরো অনেক অনেক সমস্যা এখানে বিদ্যমান। নিয়ম অনুযায়ী একজন অটিজম বাচ্চার জন্য প্রয়োজন এক জন শিক্ষক । কিন্ত এই স্কুলে প্রায় ২৫ জন অটিজম বাচ্চাসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী মিলিয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। শিক্ষক রয়েছে সব মিলিয়ে মাত্র  ৩ জন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিখা রানীর সাথে। তিনি বিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বলেন,প্রতিবন্ধী সকল শিশুই অসহায়। আমাদের স্কুলে পড়া বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র। একেতো প্রতিবদ্ধী তার উপর রয়েছে পরিবারের দারিদ্রতা। তাই দরিদ্র বাবা-মা অনেক সময় আমাদের স্কুলের সামান্য খরচও দিতে পারে না। তারা আবার শিক্ষা সামগ্রী দিবে কিভাবে। তাই আমরা সমাজের বিত্তবানদের কে অনেক সময় অনুরোধ করে কিছু কিছু সহযোগিতা নিয়ে কোন মতে বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তাই আমাদের সমস্যা গুলো সমাদানের জন্য সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ করছি।