জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও আদালতে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তী শুনানির জন্য তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করেছেন। বিচারক তার আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
রাজধানীর বকশীবাজারস্থ কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে আজ খালেদা জিয়ার হাজির হওয়ার কথা ছিল।
খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আদালতে সময় প্রার্থনা করেন। তিনি আদালতকে জানান, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এছাড়া তিনি এই মামলায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা এনে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন। এই আবেদনের শুনানি হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। পরে বিচারক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হবেন এজন্য সকাল থেকেই বকশীবাজার ও আশেপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা আরোপ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরাও ওই এলাকায় অবস্থান নেন। রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশ ছাত্রদল কর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে তারা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ন্যায়বিচার পাবেন না- এই আশঙ্কা থেকে দুর্নীতির দুই মামলায় বিশেষ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গতকাল বুধভার উচ্চ আদালতে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। আগামী সোমবার এ ব্যাপারে শুনানি হবে।
বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও ভীষ্মদেবের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনটি করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জাকির হোসেন ভুঁইয়া আবেদনটি জমা দেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা বিচারের জন্য স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়ের প্রতিও এর আগে অনাস্থা জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ২০১৪ সালের মার্চে বিচার শুরুর পর তার প্রতি অনাস্থা জানান খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাসুদেবকে পটুয়াখালী বদলি করে আবু আহমেদ জমাদ্দারকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষের বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। সেদিনই মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি করা আবেদনের কথা বলে বক্তব্য দিতে চাননি খালেদা জিয়া। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর অবস্থানকে আমলে না নিয়ে শুনানি চালিয়ে যান বিচারক। এরপর বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান খালেদা জিয়া। তার এই অনাস্থাকেও অবশ্য আমলে নেননি বিচারক।
সেই দিনের শুনানিতে এই মামলায় পুনরায় শুনানির দিন ঠিক করা হয় ৯ ফেব্রুয়ারি। আজ খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন জানালেন।
দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এই মামলাটি নিয়ে খালেদা জিয়ারে আইনজীবীরা অসংখ্যবার উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। তবে প্রতিবারই তাদের আবেদন নাকচ হয়েছে।